সিম্ফনি W20: রাফ ইউজের সেরা স্মার্টফোন


(পিসি বাংলাদেশ) বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের দেশের বাজারে স্মার্টফোনের জয়জয়কার। স্বল্প বাজেটের মধ্যেও যারা মোবাইল কিনতে ইচ্ছুক তারাও বাজারে উকি দিয়ে দেখছে তাদের বাজেটের মধ্যে স্মার্টফোনের আছে কি না। এবং সবচেয়ে আনন্দের কথা হল স্বল্প বাজেটের মধ্যেই অনেকে ইতিমধ্যে স্মার্টফোন ব্যাবহারের অভিজ্ঞতা অর্জন ফেলেছে। আর যারা এখনো করতে পারেনি তাদেরকে আজ খুবই কম মূল্যের একটি স্মার্টফোনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ।

এই কিছুদিন আগে সিম্ফনি বেশ কয়েকটি স্মার্টফোন বাজারে আনে। তার মধ্যে খুবই কম মূল্যের কিন্তু বেশ ভাল মানের একটি স্মার্টফোন হল সিম্ফনি W20। বাজারে এসেই সাড়া ফেলে দিয়েছে ডিভাইসটি। মাত্র ৫,১৫০ টাকা মূল্যের এই স্মার্টফোনটি সিম্ফনি বিক্রি করছে গ্রামীনফোনের মাধ্যমে শুধুমাত্র গ্রামীণফোন সেন্টার থেকে।
W20_main_1.jpg
সিম্ফনির ওয়েবসাইটে দেওয়া W20 এর ছবি যার সাথে আসল W20 এর কিছুটা অমিল রয়েছে
এক নজরে স্পেসিফিকেশনঃ
  • 1 GHz Single Core Processor
  • 3.5" HVGA(320*480) TFT Capacitive Full Touch
  • 512 MB ROM & 256 MB RAM
  • PowerVR SGX 531 GPU
  • Android 2.3 Gingerbread
  • 2MP back camera
  • 1400mAh battery, Bluetooth, Wi-Fi (No GPS)
  • Proximity Sensor, G-Sensor, Accelerometer
  • Price only 5150 Tk
W20_main.jpg
সিম্ফনি W20।
ডিজাইনঃ
সিম্ফনি W20 এর ডিজাইন বেশ আকর্শনীয়। এটিকে ডিজাইন করা হয়েছে এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোন হিসেবে যা সবসময় ব্যাবহার করা যাবে। ফোনটি পুরোপুরি প্লাস্টিক বডি। এর আকৃতি 116×60.8×12.85mm। অর্থাৎ এর পুরুত্ব কিছুটা বেশী (১২.৮৫ মিলিমিটার)। স্মার্টফোনটির ডানপাশে আছে লক/পাওয়ার কী এবং বামপাশে ভলিউম রকার। উপরে আছে ৩.৫ মিলিমিটার এবং নিচে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট।
হার্ডওয়্যারঃ
স্মার্টফোনের পারফরমেন্স নির্ভর করে মূলত এর হার্ডওয়্যারের উপর। যেহেতু স্মার্টফোনটি খুবই স্বল্পমূল্যের তাই তার প্রভাব স্বাভাবিকি ভাবেই পড়েছে এর হার্ডওয়্যারের উপর। তারপরেও বেশ ভাল মানের হার্ডওয়্যার দিয়েছে তারা। স্মার্টফোনটিতে আছে ১ গিগাহার্টজ সিঙ্গেল কোর প্রসেসর যা এর দ্বিগুন মূল্যের স্যামসাং গ্যালাক্সি ওয়াইতেও দিতে পারেনি স্যামসাং। আর এতে জিপিইউ হিসেবে আছে PowerVR SGX 531 যা প্রিমো জি১, সিম্ফনি W90 তেও ব্যাবহার করা হয়েছে। তবে এর অন্যতম দূর্বলতা এর র্যা ম এ। র্যা ম আছে ২৫৬ মেগাবাইট এবং রম ৫১২ মেগাবাইট। স্থে থাকছে মেমোরি কার্ড ব্যাবহারের সুযোগ। এছাড়া আরো আছে ওয়াইফাই, জি সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর এবং আক্সেলেরোমিটার সেন্সর। তবে এটাতেও W60 এর মত জিপিএস দেয়নি তারা।
ডিসপ্লেঃ
W20 তে আছে ৩.৫ ইঞ্চি টিএফটি ক্যাপাসিটিভ টাচ ডিসপ্লে যার রেজুলেশন ৩২০*৪৮০ পিক্সেল। ব্যাবহার করে বেশ ভালই পারফরমেন্স পাওয়া গেছে এই ডিসপ্লে থেকে। দিনের আলোতে স্ক্রিনটি বেশ ভালই দেখা যায়। এছাড়া ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলও মোটামুটি ভাল। টাচ সেন্সিটিভনেস এবং পিঞ্চ ইন/আউট পারফরমেন্স এককথায় ভাল। একেবারেই স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন হিসেবে এর ডিসপ্লে কোয়ালিটি বেশ ভালই।
W20_disp.jpg
(ডিসপ্লে) লক স্ক্রিন ইন্টারফেস এবং অ্যাপ ট্রে
ওএস এবং ইন্টারফেসঃ
স্মার্টফোনটির অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আছে এন্ড্রয়েড ২.৩.৬ জিঞ্জারব্রেড। ২৫৬ মেগাবাইট র্যাবম এর জন্য এরচেয়ে উপরের ওএস ব্যাবহারকরতে গেলে ফোনটি স্বাভাবিক ভাবেই স্লো হয়ে যেতে পারে। লক স্ক্রিনটি ব্যাবহার করা হয়েছে কিছুটা আইফোনের মত (ছবি দ্রষ্টব্য)। এছাড়া জিঞ্জারব্রেড এর বাকি ইন্টারফেসগুলোর মতই এর ইন্টারফেস।
মাল্টিমিডিয়াঃ
একেবারেই এন্ট্রিলেভেল স্মার্টফোন হিলেও মাল্টিমিডিয়ার জন্য বেশ ভালই স্মার্টফোনটি। অডিও বা ভিডিও দুইটিতেই ভাল পারফরমেন্স পাওয়া গেছে। ৭২০পি মানের ভিডিও চলেছে কোন সমস্যা ছাড়াই। এছাড়া সাউন্ড কোয়ালিটিও বেশ ভাল। শব্দও বেশ জোরালো শোনা যায়। তবে স্বাভাবিক ভাবেই সবচেয়ে ভাল মানের সাউন্ড পেতে হলে হেডফোন ব্যাবহার করতে হবে।
ক্যামেরাঃ
স্মার্টফোনটিতে ক্যামেরা আছে শুধু পিছনের দিকে। ২ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরাটির পারফরমেন্স খুব একটা ভাল নয়। তবে নরমাল কাজগুলি চালিয়ে নিতে পারবেন। তবে অত্যাশ্চর্য বিষয় হল ক্যামেরার সাথে দেওয়া হয়েছে ফ্ল্যাশ। ফলে এই ফ্লাশকে আপনি টর্চ লাইট হিসেবেও ব্যাবহার করতে পারবেন। আর ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইট হিসেবে তো ব্যাবহার করবেনই।
কল কোয়ালিটিঃ
ফোনটির কল কোয়ালিটি এক কথায় বেশ ভাল। সাউন্ড কোয়ালিটি এবং মাইক বেশ ভাল হওয়ায় ইনকামিং বা আউটগোয়িং উভয়ক্ষেত্রেই ভাল পারফরমেন্স পাওয়া গেছে। নেটওয়ার্কেও কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। আর ফোনটিতে আছে ডুয়েল সিম ডুয়েল স্ট্যান্ডবাই সুবিধা যার দুটি সিম স্লটেই GSM প্রযুক্তির সিম কার্ড ব্যাবহার করা যাবে। তবে ৩জি সুবিধা নেই ফোনটিতে। সিম ম্যানেজমেন্টেও কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি যেমনটি ছিল ওয়ালটন প্রিমো তে। সুতরাং সবসময় কথাবলার জন্য বেশ ভাল একটি ডিভাইস হতে পারে এটি।
মেসেজিং:
ডিভাইসটিতে মেসেজিং সুবিধা বেশ ভাল মানের। ৩.৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের কীবোর্ডে বেশ ভালই টাইপ করা যায়। তবে এখানেও আছে অত্যাশ্চর্য একটি বিষয়। একটি বাংলা কীবোর্ড ইন্টিগ্রেটেড হিসেবে সেট করে দিয়েছে সিম্ফনি। যা দিয়ে ফনেটিক স্টাইলে সহজেই বাংলা লেখা যায়। ফলে বাংলা লেখার জন্য এটিতে এক্সটার্নাল কীবোর্ড ব্যাবহারের কোন প্রোয়োজন হবে না। আর ফন্টও বেশ সুন্দর। এই বিষয়ে সিম্ফনির সুনাম বেশ পুরনো।
W20_keyboard.jpg
অ্যাপ্লিকেশান এবং গেমিং:
অনেক বেশী অ্যাপ্লিকেশান ব্যাবহার করার জন্য ডিভাইসটি খুব বেশী ভাল নয় এর র্যাাম এর জন্য। তবে সাধারন অ্যাপস এবং গেমস খেলতে কোন সমস্যা হয়নি ডিভাইসটিতে। ইন্টিগ্রেটেড হিসেবে এন্ড্রয়েডের ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশান গুলো দেওয়া আছে ডিভাইসটিতে। নেট ব্রাউজিং পারফরমেন্সও বেশ ভাল পাওয়া গেছে ডিভাইসটিতে। পিঞ্চ ইন/আউট ভাল হওয়ায় ব্রাউজিংয়ে বেশ সুবিধা পাওয়া গেছে।
W20_net.jpg
W20 এর তে প্রিয় টেক এবং গুগল প্লে স্টোর
জিপিএস না থাকায় ধারণা করেছিলাম ম্যাপিং অ্যাপস এর অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ হবে। কিন্তু এখানে একটি ধাক্কা খেতে হল। জিপিএস না থাকলেও লোকেশন লোকেট করছিল ডিভাইসটি। ধারণা করছি নেটওয়ার্ক টাওয়ার এর মাধ্যমে এটা সম্ভব হচ্ছিল কিন্তু আমি আসলেই জানিনা কিভাবে এটা সম্ভব। আপনারা কেউ জেনে থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ থাকল।
আগেই বলেছি বড় বড় গেমস খেলার জন্য ডিভাইস এটি নয়। কিন্তু অ্যাংরি বার্ডস, রেসিং মোটো সহ সাধারন গেমস গুলো সহজেই চলবে। অ্যাংরি বার্ডস খেলে দেখা হয়েছে এবং তাতে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ টুকিটাকি গেমিংও করা যাবে ডিভাইসটি দিয়ে।
ব্যাটারিঃ
যেহেতু সবসময় ব্যাবহারের জন্য ডিভাইসটি তাই ব্যাটারি ব্যাকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ন। কারন সবসময় ব্যাবহারের জন্য মোবাইলে ঘন ঘন চার্জ দেওয়াটা খুবই সমস্যা। W20 স্মার্টফোনটিতে দেওয়া হয়েছে ১৪০০ এমএএইচ ক্ষমতার ব্যাটারি যা ওয়ালটন প্রিমো এর চেয়ে ভাল। প্রথমদিনে সারাদিনই টুকিটাকি ব্যাবহার করে ১৬-১৮ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ পাওয়া গেছে। ধারণা করছি সাধারন ব্যাবহারে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুইদিন পর্যন্ত ব্যাকআপ দিবে ডিভাইসটি। আর চার্জ হতে সময় লেগেছে দেড় থেকে দুই ঘন্টার মত।
মূল্যঃ
সিম্ফনি সবচেয়ে বড় চমকটি দিয়েছে এর মূল্য দিয়ে। এর মূল্য নির্ধারন করেছে মাত্র ৫,১৫০ টাকা। এই মূল্যে এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন কেউ ই আশা করতে পারেনি এতদিন। কিন্তু সিম্ফনি বেশ ভাল মানের এই ডিভাইসটি এই মূল্যে দিতে সক্ষম হয়েছে। যার ফল হিসেবে বাজারে ছারার কয়েকদিনের মধ্যেই স্টক শেষ হয়ে গেছে ডিভাইসটির। এখন পরবর্তী স্টক বিক্রির জন্য গ্রামীণফোন সেন্টার এ নাম নিবন্ধন করা হচ্ছে আগ্রহীদের।
শেষ কথাঃ
এককথায় বেশ ভাল লেগেছে ডিভাইসটি এর মূল্য এবং পারফরমেন্স বিবেচনা করে। ল্যাকিংস বলতে আমার কাছে ২৫৬ মেগাবাইট র্যাসম এবং জিপিএস না থাকাটা। এছাড়া সবকিছু মিলিয়ে সবসময় ব্যাবহারের জন্য দারুণ একটি ডিভাইস সিম্ফনি W20।
সিদ্ধান্তঃ
সবকিছুই বর্ননা করা হল উপরে। আপনি যদি সবনসময় ব্যাবহারের জন্য একটি এন্ড্রয়েড ডিভাইস চান তবে এটা একটি ভাল অপশন। তবে যদি আরো অপেক্ষা করতে চান সেটাও করতে পারেন কারন দেশের বাজারে কেবল স্মার্টফোন আসা শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে একই ধরনের আরো স্মার্টফোন আসবে বলে আশাকরা যায়। সিদ্ধান্ত এখন আপনার হাতে!

(সংগৃহীত)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ