ফোন হ্যাক করতে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় এই সফটওয়্যার, আপনার ফোনে নেই তো?




বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্বের সমস্ত হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোন হ্যাক করার ঘটনা সামনে আসছে। জালিয়াতরা বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই হ্যাকিং করছে। আজ আমরা আপনাদের এমনই একটি সফটওয়্যারের ব্যাপারে জানাবো যেটি এই হ্যাকিং এর জন্য ব্যবহার করা হয়।
পেগাসাস-
এই সফটওয়্যারটি কোন সাধারণ সফটওয়্যার নয় যেগুলো আপনি অনলাইনে খুব সহজে পেয়ে যান। বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত এই হ্যাকিং এবং স্পাইং সফটওয়ারটি তৈরি করেছে ইসরাইলের একটি স্পেশালাইজড সার্ভিলেন্স টেকনোলজি সফটওয়্যার কোম্পানি এন এস ও গ্রুপ। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া এই কোম্পানির বর্তমান কর্মচারীর সংখ্যা ৫০০ জন এবং কোম্পানিটির ২০১৭ সালে মূল্য ছিল ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই পেগাসাস সফটওয়্যারটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যেকোনো মানুষের স্মার্টফোন হাইজ্যাক করে নেয়। যদি কোন মানুষ পেগাসাসের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির স্মার্টফোন হ্যাক করার চেষ্টা করেন তাহলে তাকে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে সেই ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপে শুধুমাত্র একটি “মিসড্ কল” করতে হবে। শুধুমাত্র দু’বার হোয়াটসঅ্যাপে রিং হলেই সেই ব্যক্তির ফোনে পেগাসাস এজেন্ট ইন্সটল হয়ে যায়। ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল ফিচারটি আসার সঙ্গে সঙ্গেই পেগাসাস ব্যবহার করে হ্যাকিং এর ঘটনা সামনে আসতে থাকে। তারপরেই হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ পেগাসাসের নির্মাতা কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। জেনে নিন পেগাসাসের ব্যাপারে কিছু জরুরী তথ্য-
১ . এই পেগাসাস সফটওয়্যারটি অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, ব্ল্যাকবেরি উইন্ডোজ ফোন, সিম্বিয়ান এমনকি টাইজেন অপারেটিং সিস্টেম এর উপরে চলা সমস্ত স্মার্টফোন হ্যাক করতে পারে।
২ . পেগাসাসের মাধ্যমে যারা হ্যাকিং করতে চান তাদেরকে কেবলমাত্র পেগাসাস এজেন্টটিকে ওই ব্যক্তির স্মার্টফোনে গোপনে ইন্সটল করতে হয়।
৩ . যেকোন ব্যক্তির ফোনে পেগাসাস ইনস্টল করার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো ফিশিং মেসেজ যেগুলি হলো মূলত একটি ইমেইল অথবা মেসেজ যাতে একটি ক্ষতিকারক লিংক দেওয়া থাকে।
৪ . কোন ব্যক্তির মোবাইল নম্বর অথবা ইমেইল আইডি হ্যাকারের কাছে না থাকলেও তারা খুব সহজেই বেস ট্রান্সিভার স্টেশন বা বিটিএস এর মত ট্যাকটিক্যাল নেটওয়ার্ক এলিমেন্টের মাধ্যমে গোপনভাবে সেই ব্যক্তির ফোনে পেগাসাস এজেন্টকে ইন্সটল করে দিতে পারে।
৫ . একবার পেগাসাস ইন্সটল হয়ে গেলে হ্যাকারদের কাছে সেই ব্যক্তির ফোনের সমস্ত তথ্য যেমন এসএমএস রেকর্ড, কন্টাক্ট ডিটেইলস, কল হিস্ট্রি, সমস্ত ধরনের মেসেজ, ব্রাউজিং হিস্ট্রি, এমনকি ক্যালেন্ডারের হিস্ট্রিও চলে আসে।
৬ . এই পেগাসাস এজেন্টটি হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপ, ব্ল্যাকবেরি মেসেঞ্জার সহ সমস্ত ধরনের মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মেসেজ চুরি করতে পারে।
৭ . এছাড়াও পেগাসাস গোপনে বিভিন্ন ছবি তোলা, চারপাশের আওয়াজ রেকর্ড করা ইত্যাদি কাজও করতে পারে।
৮ . পেগাসাস এজেন্টের কাজ হয়ে গেলে হ্যাকাররা যেকোনো মুহূর্তে কিলসুইচ বাটনটি ব্যবহার করে ওই ব্যক্তির ফোন থেকে পেগাসাস এজেন্টটিকে সরিয়ে নিতে পারে।
৯ . এন এস ও গ্রুপ দাবি করে যে তারা শুধুমাত্র সরকারি কাজের জন্যই পেগাসাসকে তৈরি করেছে। মেক্সিকো এবং পানামা সরকার পেগাসাসকে ব্যবহার করে তাদের দেশের লোকেদের ব্যাপারে সমস্ত তথ্য জানতে পারে।
১০ . এই পেগাসাসকে ব্যবহার করতে হলে অনেক বড় আইটি আর্কিটেকচার দরকার পড়ে। এন এস ও গ্রুপের এজেন্টরা তাদের ক্রেতাদের কাছে গিয়ে পেগাসাস ইনস্টল করে দিয়ে আসে।
পেগাসাস ইনস্টল করতে আপনার কমপক্ষে যে যে জিনিস গুলো দরকার পড়ে-
কম্পিউটারগুলির জন্য- কোর আই ফাইভ প্রসেসর, ৩ জিবি র‌্যাম মেমোরি, ৩২০ জিবি হার্ড ড্রাইভ, উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেম।
সিস্টেম ইনফ্রাস্ট্রাকচার- দুটি ৪২U ক্যাবিনেট, নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার, ১০ টেরাবাইট স্টোরেজ, ৫ টি স্ট্যান্ডার্ড সার্ভার, ইউপিএস, সেলুলার মোডেম এবং সিম কার্ড।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

No Spam Link is Allowed