সিম্ফনি এক্সপ্লোরার টি৮ - সাধ্যের মধ্যে অসাধারন একটি ট্যাব


সম্প্রতি গ্রামীনফোনের সাথে যুক্ত হয়ে সিম্ফনি স্বল্পমূল্যে তাদের প্রথম ট্যাবলেট টি৭ ও টি৮ এনে দেশের প্রযুক্তি বাজারে বেশ শোরগোলই তৈরি করে ফেলেছে। তবে সবজায়গায় আলোচনার কেন্দ্রে আছে তাদের টি৮ ট্যাবটি। ১ জিবি RAM, বেশ ভাল পারফরমেন্সের হার্ডওয়্যার এবং স্বল্পমূল্যের কারনে এদেশের প্রযুক্তিপ্রেমীরা ছুটছে তাদের প্রথম ট্যাব কেনার জন্য। ট্যাব দুটির মূল্য নিরধারন করা হয়েছে যথাক্রমে ১০,৮৫০ টাকা এবং ১২,৮৫০ টাকা। সাথে থাকছে গ্রামীনফোনের সংযোগ এবং শর্তসাপেক্ষে প্রথম ৫ মাস সর্বোচ্চ ১০ বার মাত্র ৯৯ টাকায় ১ জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজ যার প্রতিবারের মেয়াদ ৩০ দিন। আর ট্যাবটি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে শুধুমাত্র গ্রামীনফোন সেন্টারে। প্রযুক্তিপ্রেমীরা যেন তাদের কাঙ্খিত ট্যাব কেনার পূর্বে বিস্তারিত কিছু জানতে পারে সেই ট্যাব এর বিষয়ে তাই এই রিভিউ তৈরি করার অবতারণা।

ডিজাইন এবং হার্ডওয়্যারঃ

ভাল ব্রান্ডের সব মোবাইল বা ট্যাবের ডিজাইনের পিছনে গবেষণা করতে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। যার প্রভাব খুব স্বাভাবিক ভাবেই পড়ে তার মূল্যের উপর। এইদিক থেকে টি৮ ট্যাবের ডিজাইন এবং মূল্য বেশ আশাব্যাঞ্জক। ট্যাবটির পুরোটাই প্লাস্টিক মোড়ানো। পিছনে ব্যাক কভারের উপর আরেকটি টেক্সার লেয়ার যোগ করা হয়েছে যা অবশ্যই ব্যাবহারকারীদের কিছুটা সুবিধা দেবে। ট্যাবটির উপরের দিকে আছে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট এবং ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট। তার পাশেই আছে সিম কার্ড স্লট এবং মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট। ডানপাশে আছে পাওয়ার বাটন, লক বাটন এবং ভলিউম রকার। বামপাশে বা নিচে আর কোন পোর্ট নেই।
undefined
ডিজাইনের দিক দিয়েও বেশ ভাল ট্যাবটি।
ট্যাবটির মুল আকর্ষন হল এর বেশ ভাল মানের হার্ডওয়্যার। টি৮ এর সবথেকে বড় চমক হল ১ গিগাবাইট RAM। এই মূল্যে ১ জিবি RAM আসলেই কল্পনাতীত। এর RAM-ই আপনাকে বাধ্য করবে ট৭ না কিনে প্রায় ২ হাজার টাকা বেশি দিয়ে টি৮ কিনতে। ট্যাবটিতে আরো আছে MTK6577 মডেলের 1GHz ডুয়েল কোর প্রসেসর যা যথেষ্ট গতির যোগান দেয় ট্যাবটিতে। আর জিপিইউ হিসেবে আছে PowerVR SGX531। ইন্টারনাল মেমরি আছে ৪ গিগাবাইট যার ২.৫ জিবির বেশি আপনি ব্যাবহার করতে পারবেন সাথে ৩২জিবি পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যাবহারের সুবিধা তো থাকছেই। কেনার সময় ফ্রি দেওয়া হচ্ছে ৮ জিবি মেমোরি কার্ড। ট্যাবটির সামনে আছে ভিজিএ ক্যামেরা এবং পিছনের ক্যামেরাটি ২ মেগাপিক্সেলের। আমাদের দেশে যেহেতু ওয়াইফাই এর প্রচলন বেশ কম তাই মোবাইল ইন্টারনেটই ভরসা। এজন্য সিম কার্ড স্লটও সংযুক্ত করা হয়েছে ট্যাবটিতে। সিম কার্ড হিসেবে যেকোন জিএসএম সিম ব্যাবহার করতে পারবেন তা ২জি হোক বা ৩জি ! আর জিপিএস, ওয়াইফাই, এক্সেলেরোমিটার সেন্সর, মোশন সেন্সর, জি সেন্সর সহ টুকিটাকি বাকি সবই আছে ট্যাবটিতে।

ডিসপ্লে এবং সাউন্ডঃ

স্বল্পমূল্যের পন্যের মূল প্রভাবটা পড়ে তার স্ক্রীনের মানের উপর। যার দৃষ্টান্ত আপনারা দেখেছেন স্বল্পমূল্যের কিছু স্মার্টফোনে। এমনকি যখন কিন্ডল ফায়ার বের হল তখনও এর অন্যতম দূর্বলতা ছিল ডিসপ্লে (১২৮০*৬০০)। আপনি যদি টি৮ কে নেক্সাস বা কিন্ডল এর সাথে তুলনা করেন তবে আপনি কিছুটা হতাশ হতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি এর মূল্য এবং পরিপ্রেক্ষিত চিন্তা করেন তবে খুব বেশি হতাশ হবেন না আশাকরি। টি৮ এ ব্যাবহার করা হয়েছে ৮” টিএফটি ক্যাপাসিটিভ টাচ ডিসপ্লে যার রেজুলেশনের ৯৭৬*৭৬৮ পিক্সেল। যা দিয়ে আপনি গেমস, মুভি, অ্যাপস প্রভৃতি উপভোগ করতে পারবেন স্বাভাবিক ভাবে। আপনি যদি আগে খুব ভালমানের ট্যাব ব্যাবহার করে না থাকেন তবে এর ডিসপ্লে দেখে আপনার মনে হবে না যে আপনি স্বল্পমূল্যের একটি ট্যাব ব্যাবহার করছেন।
T8_home.jpg
টি৮ এর হোমস্ক্রিন
এর সাউন্ড কোয়ালিটিও বেশ ভাল। এখন পর্যন্ত কোন ব্যাবহারকারীর নিকট থেকে এর সাইন্ড কোয়ালিটি নিয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। স্বাভাবিক সাউন্ডেই আপনি মুভি বা গেমস উপভোগ করতে পারবেন। তবে সবচেয়ে ভাল কোয়ালিটির সাউন্ড উপভোগ করতে পারবেন হেডফোন ব্যাবহার করে।

সফটওয়্যারঃ

যেকোন ট্যাব বা স্মার্টফোনের মূল জীবনী হল বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশান। আর ট্যাব ব্যাবহার করা হয় সব অ্যাপস গুলো ব্যাবহারের সম্পূর্ন স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য বিশেষ করে এর বড় সাইজের স্ক্রীনের জন্য। টি৮ এর ৮” স্ক্রিনে আপনি বেশিরভাগ অ্যাপ গুলো নির্বিঘ্নে ব্যাবহার করতে পারবেন।
T8_app tray_0.jpg
এক ট্রেতেই রাখতে পারবেন ৩০টি অ্যাপ !
ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট অ্যাপস যেমন ব্রাউজার, স্কাইপি, জিমেইল, ম্যাপস প্রভৃতি ব্যাবহারে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যায় এই ট্যাব থেকে। আর নেট ব্রাউজের জন্য আসলেই আসাধারন এই ট্যাবটি। চকচকে বাংলা পড়তে পারবেন আপনি যদিও বাংলা ফন্টগুলো কিছুটা চিকন দেখায়। পিঞ্চ ইন/আউট পারফরমেন্সও দারুন। কী-প্যাড বেশ বড় হওয়ায় টাইপিং ও বেশ স্বাচ্ছন্দে করা যায়।

নেট ব্রাউজ করে বেশ মজা পাবেন এর ৮" স্ক্রিনের জন্য
মানুষের ট্যাব কেনার একটা মুখ্য উদ্দেশ্য হল ই-বুক পড়া। আর সেদিক দিয়ে কাউকেই হতাশ করেনি সিম্ফনি। ৮” স্ক্রিনে বেশ ভালোভাবেই পড়তে পারবেন ইবুক। আর ইবুক পড়ার সময় ব্রাইটনেস একটু কমিয়ে দিলে চোখের উপর আলোর প্রভাবটা কম পড়বে এবং ব্যাটারি ব্যাকআপও বেশ ভাল পাবেন। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অ্যাপ্লিকেশান ব্যাবহার করার জন্য টি৮ খুবই ভাল মানের একটি ডিভাইস।
T8_ebook.jpg
স্বাচ্ছন্দে পড়া যায় যেকোন বই

পারফরমেন্স এবং গেমিং:

যেকোন ডিভাইসের হার্ডওয়্যারের প্রমান পাওয়া যায় তার পারফরমেন্স এবং গেমিং এ। আমার কাছে মনে হয়েছে টি৮ সেদিক দিয়ে বেশ ভাল মার্কই পেয়েছে। বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশান চালু করা বা বন্ধ করা, এক স্ক্রীন থেকে অন্য স্ক্রীনে যাওয়া, ডকুমেন্ট খোলা প্রভৃতি কাজে ট্যাবটী বেশ গতিশীল। ১ জিবি RAM এবং ১ গিগাহার্টজ প্রসেসর ট্যাবটির পারফরমেন্সকে বেশ উন্নত করেছে।
T8_prince of persia_0.jpg
টি৮ এ 'প্রিন্স অব পার্সিয়া'। এইচডি গেম খেলার জন্য ট্যাবটি আসলেই দারুন।
গেমিং পারফরমেন্স এ ট্যাবটি আসলেই অসাধারন। একাধিক ব্যাবহারকারীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে বেশ বড় স্ক্রিন এবং বেশ ভাল গতির হার্ডওয়্যারের ফলে গেমস খেলার জন্য বেশ ভাল একটি ডিভাইস টি৮। তবে মোবাইলের জন্য তৈরি কম রেজুলেশনের গেম খেলে খুব মজা পাবেন না। এইচডি গেমস গুলো আসলেই অসাধারন এই ডিভাইসে যার কিছুটা ধারনা আপনারা পাবেন স্ক্রীনশট দেখে। কারো যদি ট্যাব কেনার মুল উদ্দেশ্য থাকে গেমস খেলা এবং পকেটে টাকার কিছুটা টান থাকে তবে তার জন্য একটি পারফেক্ট ডিভাইস হবে এটি মনে হয়।

মেসেজিং এবং কল ফাংশনঃ

আগেই বলেছি বেশ বড়ো আকারের কী-প্যাডের জন্য লেখা লেখিতে দারুন সুবিধা পাওয়া যায় ট্যাবটিতে। এ কারনে যারা মেসেজিং বা চ্যাটিং অনেক বেশি করেন তারা বেশ ভাল সুবিধা পাবেন ডিভাইসটিতে। বর্তমানে ওয়েবসাইটে বাংলা লেখার প্রচলন বেশ বেড়ে গেছে। আর টি৮-এ ও বাংলা লেখা এবং স্পষ্ট ভাবে পড়ার সুবিধা আছে। ফন্টটি যদিও একটু চিকন দেখায় কিন্তু তাতে তেমন একটা সমস্যা হবে না কারো আশা করি।
T8_message.jpg
বড় আকারের কী-বোর্ডের মাধ্যমে বাংলা বা ইংরেজি সবই লেখা যায় স্বাচ্ছন্দে।
সাধারনত কল করে কথাবলার জন্য ট্যাব খুব কম ব্যাবহার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয় ভিডিও কল বা অনলাইন কল করার ক্ষেত্রে। ট্যাবটি দিয়ে স্কাইপি ব্যাবহার করে ভিডিও কল করতে পারবেন নির্বিঘ্নে কারন এতে আছে ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরা। আর ৩জি তো থাকছেই। তাছাড়া ফ্রিং বা ভাইবার ও ব্যাবহার করতে পারবেন কোন অসুবিধা ছাড়াই। এছাড়া টি৮ দিয়ে যেকোন মোবাইল বা টেলিফোনে কল করে কথা বলা যায়। তবে ট্যাবটি কানের কাছে ধরে কথা শুনতে পারবেন না আপনি, কথা শুনতে হয় লাউড স্পিকারে। ট্যাবটি সামনে রেখে বা ধরে কথা বলতে বা শুনতে কোন সমস্যা ফেস করতে হয়নি এখনো। তবে সবচেয়ে ভাল হয় হেডফোন ব্যাবহার করলে।

ব্যাটারি পারফরমেন্সঃ

এন্ড্রয়েডের অন্যতম আলোচিত বিষয় হল এর ব্যাটারি ব্যাকআপ। সেই চিন্তা থেকেই টি৮ এ ব্যাবহার করা হয়েছে ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারি। সবসময় ওয়াইফাই অন করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, টুইটার, লিংকড ইন.... ) কানেক্টেড থেকে, নিয়মিত নোটিফিকেশন ও ই-মেইল চেক করে, এবং টুকিটাকি গেমস খেলে দেড় থেকে দুইদিন ব্যাকআপ পাওয়া গেছে এক চার্জে। তবে চার্জ করতে একটু বেশি সময়ই লাগে ডিভাইসটির। ঠিক কত সময় লাগে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না এখন তবে পরে জানানোর চেষ্টা করব।

এক নজরে দূর্বলতাগুলোঃ

ট্যাবটির ভাল দিক আসলে অনেকগুলো। তাই শুধু দূর্বলতা গুলো তুলে ধরলাম।
১) স্ক্রিন এর কোয়ালিটি বেশ ভাল কিন্তু সকলের কাছে খুব ভাল নাও লাগতে পারে।
২) ব্যাটারির ক্ষমতা আরো একটু বেশি হলে ভাল হত।
৩) আর খুজে পাচ্ছি না, কারো কাছে থাকলে বলেন !

পরিসমাপ্তিঃ

সব কিছু বিবেচনা করে বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে এর চেয়ে ভাল মানের ট্যাব এই রেঞ্জের ভিতরে নেই বললেই চলে। অন্য ট্যাব গুলো থেকে টি৮ এগিয়ে গিয়েছে মূলত এর ১ জিবি RAM এবং অন্যান্য সকল সুবিধা থাকার কারনে। বাজারে তার ফল ভালই দেখা যাচ্ছে। এদেশের বাজারের বিশ্বস্ত মোবাইল রিটেইলার সিম্ফনির কাছ থেকে বেশ ভাল মানের একটি ট্যাব বেশ স্বল্পমূল্যে পেয়ে প্রযুক্তি প্রেমীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এটা কেনার জন্য। দেশের বিভিন্ন স্থানের গ্রামীনফোন সেন্টার গুলোতে স্টক শেষ হয়ে যাচ্ছে দ্রুতই। বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছ থেকে অভিযোগও পাওয়া গেছে যে তারা একাধিক জায়গায় ঘুরেও পাচ্ছে না ট্যাবটি। দেশের বাজারে বেশ ভালই চমক সৃষ্টি করল সিম্ফনির এই ট্যাবটি।

কেনা না কেনার সিদ্ধান্তঃ

সকল তথ্যই তো দেখলেন। এবার সিদ্ধান্ত আপনার এটা কিনবেন কি না। তবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের সুবিধার্থে (অসুবিধার্থে ও বলতে পারেন) আপনাদের জানাচ্ছি একই ধরনের স্পেসিফিকেশন সমৃদ্ধ ওয়ালটনের কিছু ট্যাবও বাজারে আসছে শীঘ্রই যার তথ্য ইতিমধ্যেই ওয়ালটনের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং সব কিছু বিচার বিশ্লেষন করে আপনার সিদ্ধান্ত পাকা করুন !


এই সাইটের এডমিন আমরা দুইজন। দেখা যায় দুইজনই যথা সাধ্য  চেষ্টা করি নির্ভুল পোস্ট দিতে।তবুও যদি কোন ভুল হয়ে থাকে আপনারা অবশ্যই নিচে ফিডব্যাক দিবেন। কারন আপনাদের ফিডব্যাকের মাধ্যমেই এর মান আরও উন্নত করতে চাই। কোনদিক ভাল বা খারাপ লাগলে জানান, পরবর্তিতে চেষ্টা করব সংশোধন করতে। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ